Saturday, May 30, 2020

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সমুহ এবং নিয়ন্ত্রণের উপায় ও খাদ্য তালিকা



  • ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র (Diabetes) : অগ্ন্যাশয়ের ভিতর আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস নামক এক  গ্রন্থি আছে , এই গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন () নিঃসৃত হয় । ইনসুলিন হল এক ধরনের হরমোন, যা দেহের শর্করা পরিপাক নিয়ন্ত্রণ করে । অগ্ন্যাশয়ে যদি প্রয়োজন মতো ইনসুলিন তৈরি না হয় তবে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্থায়ীভাবে বেড়ে যায় , প্রসাবের সাথে গ্লুকোজ নির্গত হয় । এ অবস্থাকে ডায়াবেটিস বা বহুমুত্র বলে ।


 
DIABETES


  • ডায়াবেটিস দুই ধরনের , টাইপ - ১ এবং টাইপ - ২

    টাইপ - ১ এ আক্রান্ত রোগীর দেহে একেবারেই ইনসুলিন তৈরী হয় না । তাই ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নিতে হয় । ডায়াবেটিস রোগীর ১০%  টাইপ - ১ আক্রান্ত হয় ।

    টাইপ - ২ রোগীর দেহে আংশিক ইনসুলিন তৈরী হয় । এক্ষেত্রে ঔষুধ , অগ্ন্যাশয় কোষকে শরীরের জন্য পরিমিত  ইনসুলিন তৈরীতে সাহায্য করে । কোনো কোনো সময় ইনসুলিনের ঘাটতি হতে পারে । এটি সংক্রমণ রোগ নয় ।


  •   বংশানুক্রমে এ রোগ হতে পারে । মা - বাবা থেকে ডায়াবেটিস হলে সন্তান এর ও হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে ।  যারা অলস জীবণ যাপন করে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে ।
  • পরিবেশগত কারণে ও ডায়াবেটিস হতে পারে।




  • ডায়াবেটিসের লক্ষণঃ

    ১। ক্লান্তি ভাব (প্রধান লক্ষণ)
    ২। ঘনঘন প্রসাব হওয়া (বিশেষ করে রাতের সময়)
    ৩। কারণ ছাড়া ওজন কমে যায়
    ৪।  চোখে ঝাপ্সা দেখা

    ৫। অতিরিক্ত পিপাসা পাওয়া
    ৬। শরীরে কোথাও আঘাত পেলে তা শুকাতে দেরি করা







  • ডায়াবেটিসের জটিলতাঃ

    ১। রক্তনালির মারাত্নক ক্ষতি পারে
    ২। শরীরে রক্ত প্রবাহিত হতে না পারাই স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যার কারণে দৃষ্টি শক্তি চলে যেতে পারে।
    ৩। পায়ে ইনফেকশন হতে পারে কিংবা পা কেটে ফেলতে হতে পারে।
    ৪।অন্ধত্ব, কিডনি নষ্ট হওয়া , স্টোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ , ইত্যাদির কারণ হলো ডায়াবেটিস ।
   ৫। শরীরে যদি চিনির পরিমাণ বেরে যায় তবে হার্ট অ্যাটাক ও হতে পারে।





  • ডায়াবেটিসের প্রতিকার :

‌   ডায়াবেটিস রোগ হলো জীবনব্যাপী রোগ এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না বরং নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
 
   ১। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। যেমন : তাজা শাক-সবজি , ফলমূল ,দানা শস্য (ছোলা , শিমের বিচি ইত্যাদি।)
   ২। একসাথে পেট ভরে না খেয়ে অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পর পর খেতে হবে।
   ৩। শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে আড়াই ঘণ্টা । জোরে জোরে হাঁটা বা সিড়ি বেয়ে উঠা।
   ৪। প্রক্রিয়াজাত করা খাবার , কোমল পানীয় , মিষ্টি জাতীয় পানীয় , সাদা পাস্তা , ফিজি ডিংকস থেকে বিরত থাকতে হবে।



  • ডায়াবেটিস প্রতিরোধ :

    মা বাবা থেকে ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানের আবশ্যই হবে তা নয়। প্রত্যাক মানুষ এর প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে হবে।

     ১। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
    ২। শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে।
    ৩। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে।
    ৪। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে।





  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায় ও খাদ্য তালিকা :

    ডায়াবেটিস চেক করার জন্য আবশ্যই Gluco meter রোগীর কাছে থাকতে হবে।
    সপ্তাহে অন্তত একবার ডায়াবেটিস থেকে করতে হবে।
    তিন মাস পর পর ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
   ‌ যুবকদের রক্তে শর্করার মাত্রা খালি পেটে ৬ পয়েন্ট , খাওয়ার দুই ঘণ্টা পর ৮ পয়েন্ট এবং গড় সুগার ৭% থাকতে হবে।

    ১। যেকোনো নির্দিষ্ট সময় ধরে দৈনিক হাঁটতে হবে । একদিন হেঁটে তিন দিন না হাঁটা বা একদিন না হেঁটে অন্য দিন বেশি হাঁটা এরকম করলে হবে না দৈনিক নির্দিষ্ট সময় ধরে হাঁটতে হবে।
    ২। খাবার প্লেটে ১/২  সবজি , ১/৪ অংশ ভাত ,  ‌১/৪ অংশ প্রোটিন বা মাছ মাংস খেতে হবে।
    ৩। দিনে ছয় ভাগ করে খাবার খেতে হবে। তিনবার সামান্য ভারী খাবার ও তিনবার হালকা খাবার । সকালে ১১ টার দিকে , বিকেলে , রাতে ঘুমানোর আগে হালকা খাবার খেতে হবে। 
    ৪। কোনো বেলার খাবার বাদ দেওয়া যাবে না।
    ৫। আশ জাতীয় ফলমূল ও শাকসবজি খেতে হবে যেমন : বড়বডি , শিম ।
    ৬। প্রাণিজ চর্বির পরিমাণ কমিয়ে উদ্ভিজ চর্বির পরিমাণ বাড়াতে হবে যেমন : সয়াবিন , সরিষার তেল , মাছ ।
    ৭। টক ফল খাওয়া যেতে পারে যেমন : আমলকী , কামরাঙা।
    ৮। ভালো প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন : ডিম , কম চর্বিযুক্ত দুধ ও টক দই খাওয়া যেতে পারে।
     ৯। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মেথীর বীজ খুবই ভালো কাজ করে।
 


  •  এর সাথে ডায়াবেটিস রোগীদের "3D" মেনে চলতে হবে।
     ১। শৃঙ্খলা (Discipline) : ডায়াবেটিস রোগীদের শৃঙ্খলার সাথে চলতে হবে। নিয়মিত
     খাদ্য গ্রহণ , নিয়মিত ব্যায়াম , দৈহিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা , বিশেষ করে পায়ের যত্ন নেওয়া ।
    ২। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ (Diet)  : খাবার নিয়ন্ত্রণ করা ডাক্তারের পরামর্শ মতো খাবার খাওয়া।
    ৩। ওষুধ সেবন (Dose) : ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা।






  • যা যা খাওয়া যাবেনা :
    ১। ভাত , আলু , কলা , মিষ্টি , মিষ্টি জাতীয় খাবার, পাউরুটি
    এসব খাবার রক্তে  শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
    ২। হোটেলের খাবার সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে।
    ৩। ধুমপান বা মদ্যপান ক একদমই করা যাবেনা।
    ৪। ভাজা বা তৈলাক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা ।
    ৫। ঘি , মাখন খাওয়া যাবেনা । 




No comments:

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

নিউমোনিয়া রোগের কারণ : নিউমোক্কাস (Penumoccus) ব্যাকটেরিয়া।